হালদা মরিচ: চট্টগ্রামের লাল স্বাদের ঐতিহ্য
লিখেছেন: মোহাম্মদ রিদোয়ানুল ইসলাম।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলার নদী-তীরবর্তী এলাকার মানুষদের কাছে হালদা মরিচ শুধু একটি ফসল নয়, এটি তাদের ঐতিহ্য ও জীবিকার অংশ। হালদা নদীর পলিমাটি আর মিঠা পানির পরিবেশে জন্ম নেওয়া এই মরিচ স্বাদ, ঘ্রাণ আর রঙে একেবারে আলাদা। মৃদু ঝাঁজ, মনমাতানো ঘ্রাণ এবং লালচে উজ্জ্বল রঙের জন্য হালদা মরিচ দিন দিন দেশি-বিদেশি বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।এ মরিচ হাটহাজারীর লাল মরিচ নামেও বিখ্যাত।
উৎপত্তি ও পরিচয়
হালদা নদীর তীরে বিশেষ ধরনের দোআঁশ বেলে মাটিতে এবং প্রাকৃতিক পলির সমন্বয়ে এই মরিচের গুণাগুণ গড়ে ওঠে। এখানকার কৃষকরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হালদা মরিচ চাষ করে আসছেন। মরিচটি চাষ করা হয় আশ্বিন-অগ্রহায়ণ মাসে, আর ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা হয়।
হালদা মরিচের রঙ উজ্জ্বল লাল। ঝাঁজ কম হলেও এর ঘ্রাণ তীব্র, যা যে কোনো রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের মেজবান গরুর মাংস রান্নায় এই মরিচ অপরিহার্য উপাদান।
চাষাবাদ ও উৎপাদন
প্রতি বছর হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান এলাকায় প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে হালদা মরিচের চাষ হয়। প্রতিবছর উৎপাদন হয় প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ মেট্রিক টন মরিচ। কৃষকদের ভাষায়, হালদা মরিচ চাষ লাভজনক হলেও এখনও এটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আধুনিকীকরণ হয়নি।
মরিচ ধৌয়ার চিত্র
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
হালদা মরিচ স্থানীয় বাজারে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য হলেও এর কদর রয়েছে বিদেশেও। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে এর রপ্তানি বাড়ছে, বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে এর চাহিদা বেশি। কৃষকরা প্রতি টন হালদা মরিচ বিক্রি করে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেন।
সমস্যা ও সম্ভাবনা
হালদা মরিচ চাষে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি বা খরার কারণে ফলন ব্যাহত হয়। তাছাড়া মানসম্মত সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবও সমস্যা তৈরি করছে। তবে কৃষকদের সহায়তায় বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় সংগঠনগুলো কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হালদা মরিচকে ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করা গেলে এর বাজারমূল্য ও সুনাম আরও বাড়বে। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তা পেলে এটি বাংলাদেশের অন্যতম ব্র্যান্ডেড কৃষিপণ্য হয়ে উঠতে পারে।