নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:
বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে নদী থেকে একাধিক মা মাছের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, যা দেশের প্রাকৃতিক মাছ প্রজনন ব্যবস্থার ওপর অশনিসংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২৪ সালের ঘটনা
২০২৪ সালের জুন মাসে মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে হালদা নদী থেকে ৬টি মা মাছ এবং ১টি শুশুক (ডলফিন) মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় জেলেরা জানান, ডিম ছাড়ার মৌসুমে মা মাছগুলো দূষিত পানি ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এসে মারা যায়।
২০২৫ সালের ঘটনা
২০২৫ সালের মে ও জুন মাসে নদী থেকে আরও ৪টি মা মাছ মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
মে মাসে ড্রেজার আঘাতে পৃথক ঘটনায় ১টি কাতলা মা মাছ এবং ১টি মৃগেল মা মাছ মারা যায়।
জুন মাসের ২২ তারিখ রাউজান ও হাটহাজারী সীমান্তে হালদা নদী থেকে একযোগে ২টি বড় কাতলা মা মাছ (ওজন ১২–১৫ কেজি) মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
হালদা রিসার্চ ল্যাবে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া মা মাছ
কারণ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন,
“ডিম ছাড়ার পর মা মাছগুলো খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময়ে যদি পানির মান খারাপ থাকে বা দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, তাহলে ব্যাকটেরিয়া সহজেই সংক্রমণ ঘটাতে পারে। দূষিত পানি ও অক্সিজেনের স্বল্পতাই মা মাছের মৃত্যুর মূল কারণ।”
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, নদীতে শিল্প-কারখানার বর্জ্য, কৃষিজ রাসায়নিক এবং নিকাশি পানি সরাসরি মিশে দূষণ তৈরি করছে। এর পাশাপাশি ড্রেজার ও নৌযানের আঘাতও মা মাছের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
স্থানীয়দের উদ্বেগ
স্থানীয় জেলে ও পরিবেশকর্মীরা হালদা নদীর দূষণ রোধ, অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ ও নিয়মিত মনিটরিং জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, হালদা নদী দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটি রক্ষা করতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
হালদা নদীর মা মাছের মৃত্যু দেশের প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে প্রাকৃতিক প্রজনন হুমকির মুখে পড়বে, যা দেশের মৎস্য খাতের জন্য বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।