হালদার চলমান প্রকল্প (২য় পর্যায়); বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে হালদার অর্থনীতি।
নদীর নিজস্ব একটা অর্থনীতি আছে। হালদা নদীও ব্যতিক্রম নয়। তবে এর অর্থনীতির দিকটি বেশ ব্যতিক্রমী। হালদা এদেশের কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক ডিম ছাড়ার স্থান। সেদিক থেকে হালদার অর্থনীতি অবশ্যই আলাদা। শুধু একটা ডিম ছাড়ার মৌসুমকে কেন্দ্র করেই হালদা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত করে শত কোটি টাকা। সেই রেণু-পোনা যখন পরিপূর্ণ মাছের রূপ লাভ করে, তখন তার প্রাক্কলিত অর্থনৈতিক মূল্য দাঁড়ায় কমপক্ষে ২৩০০ কোটি টাকা! এর বাইরে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষের চলমান পানি শোধন ও সরবরাহ প্রকল্পে হালদা নদী যে বিশাল অবদান রেখে চলেছে তা আসলে অর্থনৈতিক মূল্য আসলে অর্থের অংকে পরিমাপযোগ্য নয়। কারণ দিনে ৯ লাখ লিটার পানি হালদা যোগান দিচ্ছে এই প্রকল্পে। এসব দিক বিবেচনায় হালদা চট্টগ্রামের জন্যই এক ধরনের ' লাইফলাইন ' ধরণের ভূমিকা পালন করছে বিশেষজ্ঞদের মতে।
এই নদীকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালে একটা প্রকল্প চালু করা হয় যার সময়সীমা ২০২৭ সাল পর্যন্ত। প্রায় ৪৬ কোটি টাকার এই প্রকল্প ঘিরে হালদা পাড়ের মানুষ আশায় বুক বাঁধছে আবারও। "হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন প্রকল্প ও ব্যবস্থাপনা ( ২য় পর্যায়)" নামে এই প্রকল্পের অগ্রগতি ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান। সম্প্রতি এই প্রকল্পটি রিভাইজও করা হয়।
হ্যাচারী সংস্কার, হালদার দুই পাড়ে গবেষণা কাজের জন্য ভবন নির্মাণ, প্রস্তাবিত হালদা মিউজিয়াম, নতুন হ্যাচারী নির্মাণ, ডিমচাষীদের জন্য অ-মৌসুমে বিকল্প ও সহায়ক কর্মসংস্থান তৈরী সহ একাধিক প্রকল্প এর আওতায় চলমান। ইতিমধ্যেই হাটহাজারীতে বিকল্প কর্মসংস্থানের অধীনে ৭১ জন লোকের মাঝে ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। এতে প্রতিজন নিবন্ধিত জেলে প্রায় ৩০,০০০/- মূল্যমানের সহায়তা লাভ করেছেন, যাতে তারা বিকল্প ও সহায়ক কর্মসংস্থান তৈরী করতে পারেন। এছাড়াও রাউজান উপজেলাতেও এই সুবিধা পেয়েছেন ৭৬ জন নিবন্ধিত ডিমচাষী ও জেলে। অন্যান্য উপজেলায়ও (প্রকল্পের আওতাধীন) সুবিধাভোগীদের মাঝে এই প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।
এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় আধুনিক পদ্ধতিতে ডিম পরিস্ফূটন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, প্রশিক্ষণার্থী তৈরী ও প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ডাটাবেইজ তৈরীর কাজও চলমান। বর্তমানে এই প্রকল্প চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলার ১২ টি উপজেলায় এই প্রকল্পের অধীনে কর্মসূচী সমূহ চলমান আছে।
এই প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলায় কর্মরত সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জনাব আলমগীর হোসেন জানান, এই প্রকল্প হালদা নদীর জন্য একটা গেম চেঞ্জার হতে পারে, যদি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। নতুন হ্যাচারী ও প্রশিক্ষিত ডিমচাষী পুরো বিষয়টাতেই একটা গতি নিয়ে আসবে। তিনি যোগ করেন, হালদা কেন্দ্রীক একটা সাংস্কৃতিক বলয় তৈরী করা গেলে হালদার প্রতি সচেতনতা আরো বৃদ্ধি পাবে। হালদা নিয়ে পুঁথি, সাহিত্য, কবিতা নেই বললেই চলে। তাই এদিকটা নিয়েও কাজের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন বলে জানান তিনি।