বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ — এই কথাটি শুধু ভৌগোলিক তথ্য নয়, এটি আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি আর সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গও। নদীকে কেন্দ্র করে শত বছর ধরে গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর গান রচিত হয়েছে। একই সঙ্গে নদী উঠে এসেছে সিনেমার পর্দায়ও।
হালদা সিনেমার ডিজিটাল পোস্টার
কর্ণফুলী: নদীর নামেই কবিতা আর শিল্প
বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গর্ব কর্ণফুলী নদী। কর্ণফুলীকে নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন বিখ্যাত কবিতা কর্ণফুলী। এই কবিতায় নজরুল শুধু নদীর সৌন্দর্য নয়, নদীর গতির ভেতর এক ধরনের দ্রোহ ও বিদ্রোহও খুঁজে পেয়েছেন। তিনি লিখেছেন —
“কর্ণফুলী! কর্ণফুলী! বহে যা নিরন্তর”
এই পংক্তি নদীর উচ্ছলতা আর মানুষের জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলার ইঙ্গিত দেয়।
নজরুল ও নদী
পদ্মা থেকে হাঙর নদী: কথাসাহিত্যের বড় উপাখ্যান
বাংলা কথাসাহিত্যে নদী মানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি। ১৯৩৬ সালে লেখা এই উপন্যাসে পদ্মা নদীই মানুষের সুখ-দুঃখ আর জীবিকার কেন্দ্র।
আর একেবারে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৭৬)। এখানে নদী শুধু প্রাকৃতিক বাস্তবতা নয় — এটি মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ, রক্ত আর আত্মত্যাগের এক জীবন্ত প্রতীক। হাঙর নদী চর্যাকার শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের গোপন পথ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথাসাহিত্যে নদীকে নিয়ে লেখা এ বই এখনো কালজয়ী।
হালদা সিনেমার পোস্টার
হালদা: নদী নিয়ে সিনেমা
নদী নিয়ে সিনেমার কথায় সবচেয়ে আলোচিত নাম হালদা (২০১৭)। পরিচালক তৌকীর আহমেদ হালদা নদীর জেলে পাড়ার গল্পকে বড় পর্দায় নিয়ে এসেছেন। হালদা নদী দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মা মাছ প্রজনন ক্ষেত্র। নদী দূষণ, নদী দখল আর প্রভাবশালীদের দাপটের ভেতর দিয়ে এক নদী-নির্ভর সমাজের টিকে থাকার লড়াই এই সিনেমার মূল বিষয়। এই সিনেমার একটি বিশেষ দিক হলো, পরিচালক তৌকির ও অভিনেতা জাহিদ দুইজনই যমুনা নদীর পাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জের মানুষ।
নদীর গান ও লোকজ সংস্কৃতি
বাংলা ভাটিয়ালি, জারি-সারি, মুর্শিদি — সবখানেই নদী। ভাটিয়ালি গান তো মূলত নদীর গান। মাঝির সুর, ঢেউয়ের শব্দ আর জীবনসংগ্রামের গল্প একাকার হয়ে যায় গানে।